মাওলানা শেখ হিশাম কাব্বানি।
একদিন সাইয়িদিনা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর আদরের মা ফাতেমাতুজ জাহরা رضي الله عنهকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ও আমার মা ফাতিমা, তোমার তো বিয়ের বয়স হয়েছে। আলী رضي الله عنه সম্বন্ধে তোমার কি মনে হয়?’ খেয়াল করে দেখো যে রাসূল ﷺ তাকে সুযোগ দিয়েছিলেন তার পছন্দমত মানুষকে বিয়ে করার। আর আজকালকার দুনিয়াতে অনেক মুসলমান আছে যারা বলে যে মেয়েদের কোন সুযোগ নাই পছন্দ করার। বিশেষ করে পাকিস্তানিরা। (মাওলানা এদিক ওদিক তাকাচ্ছেন, মিটিমিটি হাসছেন, ঘর ভর্তি উনার পাকিস্তানি মুরিদ) তিনি ﷺ তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার কি সাইয়িদিনা আলী رضي الله عنهকে পছন্দ হয়?’ দেখো আদব কাকে বলে। সবচেয়ে ভালো আদব কার কাছ থেকে আসে আর সমস্ত জ্ঞান কার কাছ থেকে আসে?
أنا مدينة العلم و علي بابه
‘আমি হচ্ছি জ্ঞানের শহর আর আলী তার দরজা’। (আল-হাকীম, তিরমিজী)
জ্ঞানের শহরে প্রবেশ করতে তোমার তো একটা চাবি লাগবে আর সায়ীদিনা আলী رضي الله عنه হচ্ছেন সেই চাবি ।
রাসূল ﷺ তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তুমি কি আলী رضي الله عنه কে বিয়ে করতে রাজি আছো?’ তিনি জবাব দিলেন, ‘না’। সাইয়েদা ফাতেমাতুজ্জোহরা رضي الله عنه কে বিয়ে করার জন্য সেদিন আলী رضي الله عنه থেকে উত্তম আর কেই বা ছিল? সেই উত্তর শুনে রাসুল ﷺ এর মুখ লাল হয়ে গেল।
তার সেই উত্তর শুনে জিবরাঈল ﷵ ﷷ আসমান থেকে নেমে আসলেন। তিনি নবী ﷺ কে বললেন, ‘তাকে (ফাতিমা) জিজ্ঞেস করেন কেন তিনি না বলছেন’।
তখন নবী ﷺ তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি না বললে কেন, ও আমার মা?’
তিনি বললেন, ‘আমি রাজি আছি শুধুমাত্র একটা শর্তে’।
রাসূল ﷺ তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কি তোমার সেই শর্ত?’
তিনি বললেন, ‘আপনার জন্মের আগে যেভাবে হাদীসে বর্ণিত করা আছে।
كنت نبيا وآدم بين الروح والجسد
আমি নবী ছিলাম যখন আদম তার আত্মা আর তার শরীরের মাঝখানে ছিল।
অথবা,
আমি নবী ছিলাম যখন আদম ছিল পানি আর কাঁদার মাঝখানে।
অন্য আরেক হাদীসে আছেঃ
رواه عبد الرزاق بسنده عن جابر بن عبد الله بلفظ قال قلت: يا رسول الله، بأبي أنت وأمي، أخبرني عن أول شيء خلقه الله قبل الأشياء. قال: يا جابر، إن الله تعالى خلق قبل الأشياء نور نبيك من نوره،…
জাবির رضي الله عنه জিজ্ঞেস করেছিলেন, “আমার বাবা আর মা আপনার জন্য কোরবান হয়ে যাক। ও আল্লাহর রাসূল ﷺ সর্বপ্রথম আল্লাহ সুবহানাহুওয়াতা’আলা কি সৃষ্টি করেছিলেন? উত্তরে তিনি বলেন, ‘সর্বপ্রথম আল্লাহ সৃষ্টি করেছিলেন আমার নুর তার নিজের নূর থেকে। (মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক)।
কাজেই মানব সৃষ্টির আগের থেকে তিনি ছিলেন নবী ﷺ । আমরা বিশ্বাস করি তিনি ﷺ সবকিছুই জানেন উলুমুল আউয়ালিন ওয়ালা শিরিন। তিনি ﷺ তার মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন কেননা তিনি আমাদেরকে শিখাতে চান কিভাবে মেয়েদের কে জিজ্ঞেস করতে হয় বিয়ের প্রস্তাব বিষয়।
তিনি আমাদের নবী ﷺ। তার হুকুম পালন করার জন্য যে কেউ যেকোনো মুহূর্তে ঝাঁপ দিতে প্রস্তুত আছে। সামিয়ানা ওয়া আতা’না; আমরা শুনলাম এবং আমরা মেনে নিলাম। আমরা শুনলাম এবং আমরা বিশ্বাস করলাম।
কিন্তু তিনি (মা ফাতিমা) رضي الله عنه কি বললেন? তিনি বললেন, ‘না’। সেখানে যারা ছিল তাদের জন্য এই কথাটা তার মুখ থেকে শোনা খুবই আশ্চর্যের বিষয় ছিল।
রাসূল ﷺ তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কেন?’
উত্তরে তিনি বললেন, ‘ও আল্লাহর রসূল। সাইয়িদিনা আদম ﷵ ﷷ এর আগে থেকেই যদি আপনি নবী হয়ে থাকেন তাহলে তো আপনি সবসময় আপনার উম্মত কে নিয়ে চিন্তিত’।
এখানে একটা বিষয় বলা জরুরি। তার উম্মত হলো সমস্ত মানুষ যারা তার পরে এই দুনিয়ায় এসেছে। তারা যে কোন ধরনের ব্যাকগ্রাউন্ড থেকেই আসুক না কেন তারা তার উম্মত। যারা তার কথা মেনে নিয়েছে অর্থাৎ মুসলমান তাদেরকে বলা হয় উম্মাতুল ইযাবা।
আর যারা এখনো মেনে নেয়নি অর্থাৎ অমুসলিম তাদেরকে বলা হয় উম্মাতুদ দাও’আ। কিন্তু তারা উভয়েই উম্মাতুন নাবি ﷺ ।
তিনি বললেন, ‘ও আমার বাবা। সেই শপথের দিন থেকেই তো আপনি আপনার উম্মত কে নিয়ে চিন্তিত। এ তো সেই শপথের দিন যেদিন সমস্ত আত্মা। আল্লাহ সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো আর শপথ নিয়েছিল। যখন আপনি এই দুনিয়াতে এসেছিলেন তখন আপনি সেই উম্মতকে নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। যখন আপনি এই দুনিয়া ছেড়ে চলে যাবেন তখনও আপনি এই উম্মতকে নিয়ে চিন্তিত থাকবেন। আর হাশরের ময়দানে যখন আপনার উম্মত কে হাজির করা হবে তখনও আপনি তাদেরকে নিয়ে চিন্তিত থাকবেন। কাজেই আমারও তো সেই একই চিন্তা। আপনি যদি আমার শর্তে রাজি থাকেন তাহলে আমি তাকে বিয়ে করবো’।
তোমরা সবাই জানো যে ইসলামে দেনমোহর ছাড়া বিয়ে করা যায় না। আমি কি ঠিক বললাম? মহিলারা তোমরা কি তোমাদের স্বামীদের কাছ থেকে দেনমোহর নিয়েছো? তারা যদি না দিয়ে থাকে তাহলে এই মজলিশ থেকে তাদেরকে বের হতে দিও না। শুধুমাত্র পঁচা একটা আংটি দিয়ে তাদেরকে বিয়ে করতে দিওনা। (মাওলানা মৃদু হাসছেন, সকল মুরিদই হাসছে)
কাজেই তিনি বললেন, ‘ও আমার পিতা, আপনি তো সবসময় আপনার উম্মত কে নিয়ে চিন্তিত। আপনি যদি আমার বিয়ের এই দেনমোহরের শর্তে রাজি থাকেন তাহলেই আমি বিয়ে করবো আর সেই দেনমোহর হচ্ছে আপনার উম্মত’।
দেখেন এই হচ্ছে রসুল ﷺ -এর মেয়ে। আমাদের মা। সাইয়িদা ফাতিমা رضي الله عنه । পুরা উম্মতের শাফায়াতের পিছনে তার একটা বিশাল ভূমিকা আছে। আমরা আশা করি আমরা তার পবিত্র পায়ের ধূলার নীচে থাকবো এই দুনিয়াতে এবং আখিরাতে।
তখন জিবরীল আলাইহিস সালাম রাসূল ﷺ এর কাছে এসে বললেন, ‘আল্লাহ আপনাকে তার সালাম পাঠিয়েছেন এবং এই শর্তে তিনি রাজি আছেন’। এইভাবে আমরা ফাতিমাতুজ জাহরা رضي الله عنه -র বিয়ের দেনমোহর এর অংশ হয়ে গেলাম। এভাবেই বিচারের দিনে তিনি আমাদের হয়ে শাফায়াত করবেন। আলহামদুলিল্লাহ। আর তারপরে রসূল ﷺ এর বড় শাফায়াত হবে।
তোমরা সবাই দেখো কিভাবে একজন মহিলার হৃদয়ের ভিতর এই বিশাল দয়ার মহাসাগর লুকিয়ে আছে।
ইসলাম মহিলাদের কে কত বড় সম্মান দিয়েছে। প্রতিটা মানুষ এই দুনিয়াতে জন্ম হয় একজন মহিলার গর্ভ থেকে। কাজেই কে বড়? তারা না পুরুষ? তারা না থাকলে এই দুনিয়ার কি হতো? আমরা তো সেই জাহান্নামেই চলে যেতাম। এই দুনিয়াতে তো শাস্তি ছাড়া আর কিছুই নাই। কাজেই আমরা কত খুশি কারণ আমরা তার দেনমোহরের অংশ আর আল্লাহ নিজেই তা মেনে নিয়েছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মেনে নিয়েছেন। ফেরেশতারা মেনে নিয়েছেন। এবং তারা সবাই সেই বিয়ের সাক্ষী ছিলেন।
আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা সাইয়িদিনা মুহাম্মাদ ওয়া আলা আলিহি সাইয়িদিনা মুহাম্মাদ ওয়া সাহবিহি ওয়া সাল্লিম তাসলিমান কাথিরান কাথিরা।
বিহুরমাতিল হাবীব, বি হুরমাতি সুরাত আল-ফাতিহা।
কপিরাইট 2024 Naqshbandi.org