BN: গ্র্যান্ডশেখ আবদ’আল্লাহ্‌ আল-ফায়েজ আদ-দাগেস্তানি (কা)-র তাবিজ

গ্র্যান্ডশেখ আবদ’আল্লাহ্‌ আল-ফায়েজ আদ-দাগেস্তানি (কা)-র তাবিজ

~মাওলানা শেখ মুহাম্মাদ হিশাম কাব্বানি

“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

তাবিজকে রুকিয়াও বলা হয়। রাসুল (সা) এর কাছে এসে তারা জিজ্ঞেস করেছিলো, ‘ইসলাম আসার আগে আমরা রুকিয়া ব্যবহার করতাম। সেটা কি আমরা এখনো পরতে পারি?’, রাসুল (সা) তাদেরকে জবাব দিলেন, ‘হ্যা’।

ইসলাম ধর্মে তাবিজ বা রুকিয়া ব্যবহার করা যায় কি না সেটা আমরা আগেই ব্যখ্যা দিয়েছি, পবিত্র কোরআন এবং হাদীস শরীফের আলোকে। যখন মানুষ এটার নাম রুকিয়া থেকে পরিবর্তন করে তখন এইটা নিয়ে মানুষের মনে সন্দেহ আর দ্বিধা ঢুকে যায়। প্রায় আশি বছর আগে গ্র্যান্ডশেখ দামাস্কাসে থাকতেন, জাবাল কাসিউন পাহাড়ের উপরে, যেখান থেকে পুরা দামাস্কাস শহর দেখা যেতো। তারা গ্র্যান্ডশেখের কাছে এসে এই রুকিয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতো। তোমরা যদি গবেষনা করতে চাও, তাহলে হাদীস শরীফে রুকিয়া সম্বন্ধে খুঁজে দেখো। দেখবে, অনেক হাদীস আছে, যেখানে রাসুল (সা) বলছেন যে রুকিয়া ব্যবহার করা যায়।

সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ একটা হাদীসে আছে, একবার সাহাবারা সফরে ছিলেন, যখন তারা এমন একটা গোত্রের কাছে পৌঁছালেন যেখানে অনেক অসুস্থ একটা লোক ছিলো যে কিনা তাদের গোত্রের সর্দার ছিলো। তারা সাহাবাদেরকে জিজ্ঞেস করে, ‘আপনাদের কাছে কি এমন কিছু আছে যা দিয়ে তার এই অসুখ ভালো করা যাবে?’। সাহাবারা জবাব দেন, ‘হ্যা, আছে’। তারা তখন বলে, ‘তাহলে দয়া করে আমাদেরকে সাহায্য করেন’। সাহাবারা তখন জিজ্ঞেস করেন, ‘তার জন্য আপনারা আমাদেরকে কিভাবে পুরস্কৃত করবেন?’।

কাজেই, এখানে একটা আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লক্ষ্যনীয়। অর্থাৎ, সেই দোয়ার পরিবর্তে অন্য কিছু নেয়া বা দেয়া যায়, সেটা একটা ভেড়া বা একটা ছাগল কি অন্য কিছুও হতে পারে। তখন তারা সেই অসুস্থ সর্দারের উপরে সুরা ফাতিহা পড়ে ফু দিয়ে দেন। সুরা ফাতিহার বরকতে আর সাহাবাদের বিশ্বাসের বরকতে সেই সর্দার ভালো হয়ে যান। ওই গোত্রের লোকেরা এতোই খুশি হয় যে তারা সাহাবাদেরকে অনেক কিছু উপহার দেন।

ফেরার পথে তারা রাসুল (সা) এর কাছে এসে তাদের কাহিনী বর্ণনা করছিলেন। তাদের কাছে এটা ছিলো একটা নতুন ব্যাপার যে তারা পবিত্র কোরআনের আয়াত পড়ে দোয়া করলেন আর সেটার বিনিময়ে তাদেরকে উপহার দেয়া হলো। এটা কি হালাল হলো কি না, সেই বিষয়ে তারা রাসুল (সা) কে জিজ্ঞেস করেছিলেন। আল্লাহর রাসুল (সা) তখন জবাব দেন, ‘তোমাদেরকে যা দেয়া হয়েছে তোমাদের দোয়ার বিনিময়ে সেটা তোমরা রাখতে পারো, সেটা তোমাদের জন্য হালাল, আমাকে সেখান থেকে আমার অংশ তোমরা দিতে পারো’। এখান থেকে রাসুল (সা) সবাইকে পরিস্কার করে দিলেন যে দোয়ার বিনিময়ে অর্থ বা উপহার গ্রহণ করা যায় এবং রাসুল (সা) তাঁর অংশ তাদের কাছ থেকে গ্রহণ করেন।

রুকিয়ার কাহিনী বর্ণনা করা আছে শামস আল মারিফ বইতে, যা কিনা সেই বিখ্যাত লেখকের রচনা যিনি ইহিয়া উলুম আদ-দ্বীন বই লিখেছিলেন, ইমাম গাজ্জালি। তাঁর অনেক বইতেই তোমরা দেখবে অনেক চিহ্ন আছে, গোল বৃত্ত, ত্রিভুজ, সাথে সংখ্যা ও অক্ষরও আছে।

সেই কারনেই সারা দুনিয়ার আউলিয়া’আল্লাহ তার এই বিভিন্ন নকশা আর এমনকি নতুন তাবিজ বা রুকিয়া ব্যবহার করেছেন, এখনো করেন। তাদের তাবিজ বা রুকিয়াতে কাজ হতে পারে, বা নাও হতে পারে। কিন্তু নতুন সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নতুন সমাধান প্রয়োজন। না হলে সমস্যার পুরাপুরি সমাধান নাও হতে পারে।

তো গ্র্যান্ডশেখ যখন তুরস্ক থেকে দামাস্কাসে আসলেন তখন অনেকেই তাঁর সাথে সাথে সেখানে আসেন। তাদের অনেকেরই তখন বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হওয়া শুরু হয়েছিলো। তাদের কেউ কেউ বিভিন্ন রকম মুখ দেখছিলো আর তারা তাদের নানা রকমের ঝামেলা দিতো। জাবাল কাসিউন পাহাড়ের পুরাটাতেই অনেক নবীর কবর আছে। ৪০ জন আবদাল, যা আউলিয়াদের একটা টাইটেল বা খেতাব, তাদের মাকামও সেখানে আছে। আল্লাহ্‌ সুবহানাহুওয়াতা’আলা শাম শরীফকে পবিত্র করেছেন তাদের মাধ্যমে। প্রতি রাতে তারা সেখানে নামাজ পড়তে আসেন। সেখানে থাকা অতো সহজ নয়। তোমরা পারবা না। ভয়ে তোমরা দৌড়ায়ে পালাবা সেখান থেকে। অনেক সাহাবা (রা) আর অনেক নবী (আ)-র কবর সেই পাহাড়ে। আরো আছে অনেক জিন, তারা মানুষকে রক্ষা করে। তো সেসব মানুষ গ্র্যান্ডশেখের কাছে এসে বলত যে, ‘আমার বউয়ের সাথে আমার সমস্যা শুরু হয়েছে, আমার সন্তানের সাথে আমার সমস্যা শুরু হয়েছে, ও শেখ, আপনি আমাদেরকে এরকম কিছু একটা দিন যা আমাদেরকে এইসব সমস্যা থেকে রেহাই দেবে’।

তাদের এই আর্জির কারনে গ্র্যান্ডশেখ রাসুল (সা) এর অনুমতি নিয়ে এক রাতে এক টুকরা কাগজ আর একটা কলম হাতে নিয়ে ঘুমাতে যান। একটা ভিশন-এর ভেতরে তিনি জেগে ওঠেন আর তাঁর হাতের কলম তখন সেই কাগজের উপরে লিখছিলো একটা বৃত্তের মত করে। সেই যে লেখাটা সে রাতে তাঁর কলম থেকে এসেছিলো সেটাই আমাদের তাবিজ বা রুকিয়া যা কিনা আমরা সবাই ব্যবহার করি এতো বছর ধরে। সকল ধরনের খারাপ জিন ও বদ নজর থেকে সুরক্ষার নিয়তে আমরা এই রুকিয়া ব্যবহার করি। সেই রাতে তাঁর ভিশনে রাসুল (সা) তাঁকে বলেন, ‘এই রুকিয়া যে পরবে জিন তার সাথে কোন ঝামেলা করতে পারবে না, যদি তার কোন সমস্যা থাকে ধীরে ধীরে সেটা দূর হয়ে যাবে’।

তো গ্র্যান্ডশেখ সেটা লেখার পর সেটা তো মানুষের জন্য আরো বেশি করে লিখতে হয়েছিলো। সেই রাতের প্রায় ৫০ বছর পর, তিনি আমার বউ (হাজ্জা নাজিহা)-কে বলেন সেটাকে তাঁর জন্য সুন্দর করে লিখে দিতে। তিনি এমন কাউকে দিয়ে সেটাকে লিখাতে চেয়েছিলেন যে তখনো নিষ্পাপ ও পুন্যবান। গ্র্যান্ডশেখের হুকুমে হাজ্জা নাজিহা সেটাকে লেখেন জাফরান দিয়ে আর কালির সাথে ইউরিয়া মেশানো হয়েছিলো। আজকাল অনেক বইয়ের জন্য তারা এভাবে জাফরান আর কালি ব্যবহার করে থাকে। সেই বিশেষ জাফরান আর কালি দিয়ে স্পেশাল ক্যালিগ্রাফির কলম দিয়ে হাজ্জা সেটাকে অনেক সুন্দর করে লিখে দিয়েছিলেন।

পরে আমরা মাওলানা শেখ নাজিমকে জিজ্ঞেস করি যে, মাওলানা, প্রতিটা তাবিজ এভাবে হাতে জাফরান রং দিয়ে অনেক সময় লাগিয়ে লেখাতো অনেক কষ্টের কাজ, আমরা কি এই রুকিয়া ছাপাতে পারি? তিনি আমাদেরকে অনুমতি দিয়েছিলেন। তখন আমরা একজন ক্যালিগ্রাফারকে দিয়ে সেটাকে লিখিয়ে ছাপানোর ব্যবস্থা করি। আর আজ এই দুনিয়ার সব কোনায় কোনায় গ্র্যান্ডশেখের এই রুকিয়া ছড়িয়ে গেছে।”

এতকিছুর পরেও যদি কারোর প্রশ্ন থাকে যে তাবিজ পরা যাবে কি যাবে না, তাদের জন্য মাওলানা শেখ হিশাম এই স্কলারলি নিবন্ধ লিখে রেখেছেন। যা এখানে লিঙ্ক দেয়া হলো।

http://sunnah.org/wp/2011/05/21/is-wearing-taweez-shirk/

দ্রস্টব্যঃ

মাওলানার সকল মুরিদ সারা দুনিয়াতে এই তাবিজ বা রুকিয়া ব্যবহার করে থাকেন। রুকিয়ার কাগজ তিন কোনা করে ফোল্ড করা হয়। ছবিতে দেখানো আছে কিভাবে এই রুকিয়া চামড়ার খোলের ভিতরে সেলাই করে দড়ি দিয়ে বানানো হয়। শুধু মাত্র গোসুলের সময় ছাড়া অন্য সকল সময় তারা এই তাবিজ পড়ে থাকে। নতুন জন্ম নেয়া বাচ্চা থেকে শুরু করে যে কেউ এই তাবিজ ব্যবহার করতে পারেন। বাচ্চাদের তাবিজ সাধারণত ডাইপার পিন দিয়ে তাদের জামার পিছনের দিকে লাগানো থাকে যাতে তারা ব্যাথা না পায়। মাওলানার মুরিদেরা মাওলানার দেখাদেখি তাদের বাড়িতে দেয়ালে, জানালায়, দরজায়, গাড়িতে এই তাবিজ লাগিয়ে রাখে। ভালো জিনিস ভালো নিয়তে ব্যবহার করলে আল্লাহই তার পুরষ্কার দেন।

আজ পর্যন্ত ঢাকা শহরের বিভিন্ন দোকানে এবং বাসায় সেই তাবিজের নকশা ভেলভেটের কাপড়ের উপরে সোনালী সুতা দিয়ে হালে সেলাই করা, যা কিনা সেখানে সসম্মানে শোভা পাচ্ছে। ধানমন্ডি, নিউমার্কেটে দুবাই মার্কেটে যেখানে যেখানে মাওলানা শেখ হিশামের জন্য জোব্বা, নকশবন্দী কাপড়ের সুট, যেমনটা তারা পড়েন, বানানো হয়েছে, গত প্রায় বিশ বছর যাবত, সকল দোকানই আজ পর্যন্ত সেই তাবিজের নকশার বরকতে, গ্র্যান্ডশেখের দোয়ার বরকতে অনেক ভালো ব্যবসা করতে পেরেছে, এই লেখকের সাথে সময়ে সময়ে তাদের যখনই সাক্ষাৎ হয়েছে তারা প্রচন্ড ভক্তি ও ভালোবাসার সাথে মাওলানা শেখ হিশাম ও মাওলানা শেখ নাজিমকে তাদের সশ্রদ্ধ সালাম দিয়েছেন এবং তাদের জন্য দোয়া করতে বলেছেন।

এই গ্রুপে এমন একজন আছেন, প্রচন্ড নম্র, ভদ্র, তরিকার একজন বিশাল খাদেম, যিনি ঢাকা শহরেই থাকেন, যিনি আজ থেকে ১৩ বছর আগে এই তাবিজের নকশা বানাবার কাজ করার সময় মাওলানা শেখ নাজিম এবং মাওলানা শেখ হিশামকে স্বপ্নে দেখেন। তিনি আগে জীবনে কখনোই তাদের ছবি পর্যন্ত দেখেন নাই। তিনি এই স্বপ্ন দেখে এই লেখককে এসে তাঁর স্বপ্নের কথা জানান এবং মাওলানাদের ছবি দেখতে চান। লেখক তাকে মাওলানাদের ছবি দেখানোর সাথে সাথেই তিনি বলেন, ‘আমি তো তাদেরকেই রাতে স্বপ্নে দেখলাম’। তিনি প্রচন্ড যত্নের সাথে মাওলানা শেখ হিশামের জন্য অনেক গুলি তাবিজের নকশার পিন, রাসুল (সা) এর পবিত্র নাল মুবারক, ইত্যাদি আরো অনেক নকশা প্রচন্ড উৎসাহের সাথে করে দেন। মাওলানা শেখ হিশাম তার বানানো সামগ্রী পেয়ে প্রচণ্ড খুশি হয়েছিলেন আর তার জন্য হাত তুলে দোয়া করেন। ঢাকার কাটাবনে উনার দোকান আছে। রাশেদ ভাই তার দোকানে গিয়ে তার সাথে পরিচয় করে এসেছেন। সবাই একসাথে বড় অর্ডার দিলে উনার জন্য এই তাবিজ বানাতে সুবিধা হবে বলে তিনি আমাকে জানিয়েছিলেন। উনাকে আমার সশ্রদ্ধ সালাম, অজস্র শুভেচ্ছা, আর প্রাণ ঢালা দোয়া। তার নাম ইউসুফ ভাই।

আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা সাইয়িদিনা মুহাম্মাদ, ওয়া আলা আলিহ সাইয়িদিনা মুহাম্মাদ।

ফাতিহা।